মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৩৯ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

মক্তব শিক্ষার গুরুত্ব

শাহীন হাসনাত:

কোরআনে কারিম আল্লাহতায়ালার কিতাব। এটা মানবতার জন্য দিকনির্দেশনা ও আলোকবর্তিকা। কিয়ামত পর্যন্ত মানবজাতি যত সমস্যার সম্মুখীন হবে, তাদের যা যা প্রয়োজন হবে সব বিষয়ের বর্ণনা রয়েছে কোরআনে কারিমে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এবং আমি আপনার প্রতি এমন কিতাব নাজিল করেছি, যা প্রত্যেক বস্তুর সুস্পষ্ট বর্ণনা। হেদায়েত, রহমত এবং মুসলমানদের জন্য সুসংবাদ।’ সুরা নাহল : ৮৯

কোরআনে কারিমের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলো, যে ব্যক্তি এটি বোঝার ও অনুধাবন করার চেষ্টা করে, সে তাকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে, হৃদয়ে নাড়া দেয়। অন্তরকে মার্জিত ও পরিশীলিত করে। আত্মাকে করে সংশোধিত। মানুষকে নেক আমলের প্রতি উৎসাহী করে তোলে। তার প্রভাব শুধু মানবকুল পর্যন্তই সীমিত নয়; বরং একে যদি খুব মজবুত ও শক্ত পাহাড়ে অবতীর্ণ করানো হতো তাহলে অবশ্যই সেটি কেঁপে উঠত। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যদি আমি এ কোরআন পাহাড়ের ওপর অবতীর্ণ করতাম, তবে আপনি দেখতে পেতেন যে, পাহাড় বিনীত হয়ে আল্লাহতায়ালার ভয়ে বিদীর্ণ হয়ে গেছে, আমি এসব দৃষ্টান্ত মানুষের জন্য বর্ণনা করি, যাতে তারা চিন্তাভাবনা করে।’ সুরা হাশর : ২১

কোরআন মজিদ আল্লাহতায়ালার একটি বিশাল নেয়ামত ও বিশেষ অনুগ্রহ। শেষ নবীর উম্মত হিসেবে এটা আমরা পেয়েছি। তাই আনন্দিত হওয়ার পাশাপাশি আল্লাহতায়ালার প্রতি কৃতজ্ঞতা করে কোরআনের হকগুলো যথাযথভাবে আদায়ে সচেষ্ট হতে হবে। ইসলামি বিদ্বানদের মতে, কোরআনে কারিমের হকগুলোর অন্যতম হচ্ছেবিশুদ্ধভাবে কোরআন শেখা, কোরআন বুঝে পড়া, কোরআনের বাণী বাস্তবায়নে চেষ্টা করা এবং কোরআনের শিক্ষার প্রচার-প্রসার। আমাদের দেশে বিশুদ্ধভাবে কোরআন শেখানো ও মুখস্থ করার জন্য অনেক মাদ্রাসা রয়েছে। সেখানে অনেকেই পড়াশোনা করছে, কোরআন মজিদ মুখস্থ করে হাফেজ হচ্ছে। কিন্তু এর বাইরে প্রচুর শিক্ষার্থী ও মানুষ কোরআন শেখার সুযোগ পাচ্ছে না। তাদের পবিত্র কোরআন শেখানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

বেশ কিছুদিন আগেও প্রায় এলাকাতেই মসজিদভিত্তিক কোরআন শিক্ষার প্রভাতী মক্তব চলত। শিশুদের কোরআন শিক্ষা এবং ইসলাম সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞানার্জনের শিক্ষাকেন্দ্র ছিল সকালের এসব মক্তব। সেখানে স্কুলের শিক্ষার্থীরা শুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত, প্রয়োজনীয় মাসয়ালা, দোয়া-দরুদ ও নামাজ-রোজার নিয়ম-কানুন শিখত। গ্রামবাংলার ঐতিহ্য মক্তব শিক্ষা কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে। এখন আর আগের মতো শিশুদের দলবেঁধে কোরআন শিক্ষার জন্য মসজিদের মক্তবে যেতে দেখা যায় না। আলিফ, বা, তাএর শব্দে মুখরিত হয় না গ্রামবাংলার জনপদ। কিছুদিন আগেও সকালে গ্রামে রাস্তা দিয়ে হাঁটলে মা-বোনদের কণ্ঠে গুন গুন করে কোরআন তেলাওয়াতের আওয়াজ পাওয়া যেত। এখন এসব ইতিহাস হয়ে যাচ্ছে। নানা কারণে মক্তবগুলো বন্ধ কিংবা বন্ধের পথে। এর প্রভাব পড়ছে নতুন প্রজন্মের মধ্যে। এ কারণে এলাকার শিশু-কিশোররা কোরআন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও নামমাত্র মক্তব চালু আছে। কিন্তু সেগুলোতেও আগের মতো জৌলুশ নেই। শিশুদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। ফলে আমাদের এখনকার ছেলেমেয়েরা শিক্ষিত হলেও শুদ্ধভাবে কোরআন শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে না। কোনো কোনো অভিভাবক হয়তো বাসায় প্রাইভেট টিউটর রেখে কোরআন শেখাচ্ছেন, তাতে কেউ কেউ কোরআন এক খতম করে দায়িত্ব শেষ মনে করছে। কিন্তু প্রতিযোগিতাপূর্ণ অনুশীলন ও চর্চা না থাকার কারণে পরবর্তী জীবনে কোরআন পাঠ ভুলে যাচ্ছে।

যে ঘরে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত হয়, সে ঘরে আল্লাহতায়ালার রহমত ও বরকত অবতীর্ণ হয় বলে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন লোকেরা কোনো ঘরে একত্র হয়ে আল্লাহর কিতাব কোরআন পাঠ করে, তখন তাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হয়। আল্লাহতায়ালার রহমত ও অনুগ্রহ তাদের আচ্ছন্ন করে ফেলে। ফেরেশতারা তাদের বেষ্টন করে নেয় এবং স্বয়ং আল্লাহতায়ালা ফেরেশতাদের মজলিসে তাদের আলোচনা করতে থাকেন।’সহিহ মুসলিম: ২০৭৪

আমরা মনে করি, দেশের সুশীল সমাজ, শিক্ষাবিদ, মসজিদের ইমাম-খতিবসহ অভিভাবকদের সম্মিলিত উদ্যোগে বন্ধ হওয়ার আগেই মসজিদে মসজিদে মক্তব শিক্ষা গুরুত্ব দিয়ে চালুর জন্য সবার অগ্রণী ভূমিকা পালন করা দরকার।

লেখক : মুফতি ও ইসলামবিষয়ক লেখক

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION